উচ্চশিক্ষায় কোন দেশে যাবো?
বিদেশে উচ্চশিক্ষার চিন্তা মাথায় আসলে শুরুতেই যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খায়, সেটা হলো- কোন দেশে যাবো? যেহেতু এশিয়া, ইউরোপ, নর্থ-আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বিবেচনা করলে বেশ ভালো সংখ্যক দেশেই পড়াশোনা করতে যাওয়া যায়। এর মধ্যে অনেক গুলো দেশেই সরকারি স্কলারশিপ আছে বলে বাংলাদেশিদের যাওয়ার হার বেশি। শিক্ষার্থীরা কোন কোন বিষয় বিবেচনা করে দেশ সিলেক্ট করতে পারে সেটা নিয়ে আজকের আলোচনা।
প্রথমেই বলে নেই যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত হুজুগে নেয়া ঠিক হবে না। ‘অমুক ফ্রেন্ড এপ্লাই করলো তমুক দেশে, আমি ও করে দেই। পরে দেখা যাবে কি হয়!’ এমন ভাবনা কিন্তু হুজুগে কারণ আপনার ফ্রেন্ডের ক্যারিয়ার ইন্টারেস্ট, লাইফের গোল, রিয়েল লাইফের অবস্থা, অভিজ্ঞতা অনেক ভিন্ন হতে পারে আপনার চেয়ে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বুঝে-শুনে যাতে এ সিদ্ধান্ত আপনাকে না ভোগায়। কারণ, শুধু পড়াশুনা করতে চলে আসাটাই স্বার্থকতা নয় বরং এর পরে এ ডিগ্রি কোথায় ও কিভাবে কাজে লাগবে, স্যাটেল করার ইচ্ছে আছে কিনা, ক্যারিয়ার প্রস্পেক্ট কেমন ইত্যাদি ভেবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত।
দেশ সিলেক্ট করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে হয়-
১) স্যাটেল করবো না দেশে ব্যাক: এ প্রশ্নটা নিজেকে করা উচিত সবার আগে। আমি যে উচ্চশিক্ষায় যাচ্ছি, এ পড়াশুনা শেষ করে যদি দেশে ব্যাক করি, তাহলে দেশ সিলেক্ট করার সময় তাদের ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে খুব বেশি ভাবাভাবির দরকার নেই। কত বছর লাগে স্যাটেল করতে এসব না ভেবে পড়াশোনা কোয়ালিটি এবং ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ এ ফোকাস করা উচিত। আর যদি স্যাটেল করতে চান, তাহলে দেখতে হবে কোন দেশে ইমিগ্রেশন পলিসি কেমন, কোথায় পড়াশুনা শেষ করে সহজেই পিআর পাওয়া যায়, ভিসা জটিলতা আছে কিনা ইত্যাদি। স্যাটেল করার বিবেচনায় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের দেশগুলো এগিয়ে থাকবে যেহেতু কম্পারেটিভলি সহজে স্যাটেল হওয়া যায় ও ক্যারিয়ার প্রস্পেকট ও ভাল। আমেরিকায় ক্যারিয়ার করা সুযোগ অনেক কিন্তু স্যাটেল হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময় স্বাপেক্ষ।
২) সরকারি স্কলারশিপ নাকি ভার্সিটি ফান্ড: এরপর বিবেচনা করা যায় যে সরকারি স্কলারশিপ নাকি ভার্সিটি ফান্ডে পড়াশুনা করবো। কারণ সব দেশে সরকারি স্কলারশিপ নেই কিন্তু ভার্সিটি ফান্ডিং আছে। সরকারি স্কলারশিপ টার্গেট করলে যেসব জায়গায় আপনার সাবজেক্টে স্কলারশিপ অফার করছে, সেগুলা সিলেক্ট করতে হবে। পপুলার স্কলারশিপ গুলো যেমন ফুল-ব্রাইট, ইরাসমাস, ডাড, কমনওয়েলথ, সেভেনিং, অস্ট্রেলিয়া এ্যাওয়ার্ডসহ অনেক স্কলারশিপ আছে। দেখতে হবে কিছু স্কলারশিপে আবার শর্ত হল পড়াশোনা শেষ করে দেশে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে স্যাটেল করার প্ল্যান থাকলে সব খোজ নিতে হবে যে থাকার উপায় আছে কিনা। আর ভার্সিটি ফান্ড যে কোন দেশেই আছে অলমোস্ট।
৩) খরচ: টিউশন ফি, লিভিং কস্ট- এরপরে বিবেচনা করা যায় খরচ কেমন? যদি ফুল ফান্ড না পান, তাহলে কোথায় টিউশন ফি ও লিভিং খরচ কম সেটা ভাবা উচিত। বাকি সব ক্রাইটেরিয়ার সাথে এটা ও ভেবে দেখা উচিত।
৪) ভাষা: যে দেশে যাচ্ছি সে দেশে ভাষা ইংরেজি নাকি অন্য কিছু? এটা হয়তো অনেকে বিবচেনা করেনা কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ইংরেজি হলে ভালো। সারাজীবন সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে শিখি বলে আমাদের দখল থাকে। অন্য কোন ভাষাভাষী দেশ হলে ভার্সিটিতে না লাগলেও জীবন চালাতে সে ভাষা আয়ত্ব করার একটা প্যারা থাকে। তাই, এটিও ভাবতে পারেন যদি এমন প্যারা না নিতে চান। যদিও ফোকাস থাকবে ফান্ডে, সেটা হলে ভাষা আর তেমন কি!
৫) আবহাওয়া: এটা বিবেচনা করা উচিত। কিছু দেশে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবার কোথাও অসহনীয় গরম। যদি খুব খারাপ ওয়েদার হয়, টিকে থাকা একটু কঠিনই। আর যদি ঠাণ্ডা বা গরমজনিত কোন রোগ থাকে, তাহলে তো মাস্ট ভাবতে হবে। যে দেশে বা অঞ্চলে যাচ্ছি সেখানকার ওয়েদার ও দেখে নেয়া যায়। এগেইন, এগুলো সয়ে যায় যদি প্রপার ফান্ড ম্যানেজ হয়।
পরিশেষে, এটা জাস্ট একটা ধারণা দেয়ার জন্য লেখা। যেহেতু অনেকেই এ প্রশ্নটি করেন যে কোন দেশে যাবো সেটা কিভাবে সিলেক্ট করবো। এটা ভেবে চিন্তে করলে উচ্চশিক্ষা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। আরও ভিন্ন ফ্যাক্টর থাকতে পারে যেগুলা হয়তো ব্যক্তি ভেদে নিজের অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ।
লেখক: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, ওহাই ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র